Search

Monday, July 27, 2020

Professor Kim Jae Jon

যে সকল সোনার কাঠির স্পর্শে দক্ষিণ কোরিয়াতে আজ আমার এই অবস্থান, তার মধ্যে প্রফেসর Kim Jae Jon অন্যতম.
2009 সালের কোন এক দুপুরবেলায় Ahmed Tauhid রাসেল ভাই দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন বা কম্পিউটারে মুখ বুজে কিছু করছিলেন, হঠাৎ আমার উপস্থিত দেখে বললেন দাদা এইটা প্রফেসর Kim Jae Jon এর নাম্বার উনি এমন কাউকে খুঁজছেন যার স্কলারশিপ প্রয়োজন।
রাসেল ভাইয়ের কাছ থেকে নাম্বার নিয়ে প্রফেসর দরজার সামনে হাজির হয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার সাথে সাথে প্রফেসর বললেন, দুঃখিত স্কলারশিপটা আমি অন্য এক চাইনিজ ছাত্রীকে রিকমেন্ড করেছি। তবে হয়তো পরবর্তী সেমিস্টারে রিকমেন্ড করতে পারি। তখন বললাম তুমি যদি দয়াকরে নেক্সট সেমিষ্টারে এটা আমার ওয়াইফ Rupa Saha কে দাও তাহলে ও তোমার আন্ডারে ই-কমার্স এ মাস্টার্স করতে পারবে। প্রফেসর বললেন ওকে, এডমিশনের জন্য ডকুমেন্টস রেডি কর এবং রুপা এখানে আসার পর রুপার জন্য পার্ট টাইম এরেঞ্জ করার চেষ্টা করব।
যেমন কথা তেমনি কাজ, 2010 সালের মার্চের প্রথম সেমিস্টারের রুপা প্রফেসর এর আন্ডারে এডমিশন পেল এবং প্রফেসরের ওয়াইফ তার বান্ধবীর প্রতিষ্ঠানে বাচ্চাদের ইংরেজি শেখানোর পার্ট টাইম ঠিক করে দি্লেন। প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দিয়ে আমাকে ও রুপাকে মালিকের সাথে দেখা করতে বললেন।
দেখা করতে গিয়ে দেখি প্রফেসরের ওয়াইফ আগে থেকেই সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। রুপার পার্ট টাইম কনফার্ম হয়ে গেল। আর আমাকে জিজ্ঞাসা করল তুমি কি সাঁতার কাটতে জানো? আমিতো অবাক বাংলাদেশের গ্রামের ছেলেমেয়রা সাঁতার জানে না তাই কি কখনো হয়! বললাম হ্যাঁ। এবার জিজ্ঞাসা করলেন বাচ্চাদের সাঁতার শেখাতে পারবে? লাফ দিয়ে বলে উঠলাম কেনো পারবো না, অবশ্যই পারবো। মালিক বল্লেন ওকে, এখন থেকে রুপা ইংরেজি শেখাবে, আর তুমি শেখাবে সাঁতার, তবে ইংরেজিতে। ইউরেকা দুইজনেরই চাকরি হয়ে গেলো তাও আবার একই প্রতিষ্ঠানে।
কিন্তু একি বিপদ সাঁতারের গ্রামার! পাঁচ-ছয় দিন সাঁতার শেখানোর পর মালিক বললেন তুমি সাঁতারের গ্রামার ফলো করো না কেন? আমি বললাম সাঁতারের আবার গ্রামার কি? আমরাতো এভাবেই শিখেছি. ছেলেবেলায় কেউ বুকের নিচে হাত দিয়ে ধরে রাখত আর চার হাত-পা ঝাঁপাতে বলতো।
মালিক বললেন পরবর্তী মাস থেকে কোরিয়ান টিচার আসবেন সাঁতার শেখাতে তুমি ওনাকে হেল্প করবে এবং শিখবে। পরবর্তীতে ইংলিশে শেখাবে। আর এক্সট্রা টিচার নেওয়াতে তোমার বেতন কিছুটা হ্রাস পাবে.
এইভাবে বছর খানেক কাটতে না কাটতেই আমাদের অদিতির উপস্থিতি। আর আমি জয়েন করলাম রুপার পোস্টে। সেই থেকে আজ অবধি একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। প্রায় ১০ বছর।
প্রফেসরের তিন ছেলেমেয়ে মধ্যে মেজো ছেলে ও ছোট মেয়ে থাকেন আমেরিকায়। বড় মেয়ে ও মেয়ে জামাই চাকরি করেন রাজধানী সিউলে। বড় মেয়ে ও নাতনিকে সাহায্য করার জন্য প্রফেসরের ওয়াইফ সিউলে মেয়ের কাছে থাকেন।
প্রফেসর এর বয়স প্রায় 68 বছর। বছর কয়েক হলো চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। বর্তমানে কৃষি কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
তাই সপরিবারে আজ দেখতে গিয়েছিলাম আমাদের সবার প্রিয় প্রফেসর Kim Jae Jon কে। উনি ভালো আছেন, সুস্থ আছেন। আশাকরি সুস্থভাবে আমাদের মধ্যে থাকবেন অনন্তকাল।
ড. সৌমিত্র কুমার কুণ্ডু
গুয়াংজু, দক্ষিণ কোরিয়া।
২০২০.০৭,২৬