Search

Friday, January 3, 2025



গল্পটা শুরু হয়েছিল অনেক আগে থেকে, মানে বেশ আগে থেকেই। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই দেখতাম সংসারে অভাব অনটন লেগেই আছে। বড় পুজো আসলেই এটার প্রভাব দেখা দিতে তীব্রভাবে। নতুন জামা কাপড় মিলতো মাঝেমধ্যে অতি কষ্টে। আর তখন থেকে মনের মধ্যে ছিল বড় হবার প্রচন্ড জেদ বা আকাঙ্ক্ষা। যেখানে থাকবে না কোন অভাব বা না পাওয়ার যন্ত্রনা। দুমুঠো ভাত জোগাড় করার জন্য বাবা থাকতেন প্রচন্ড ব্যস্ত। মাও বাবাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করতেন। এর পাশে আমরা তিন ভাই কিভাবে পড়াশোনা করে মানুষের মত মানুষ হবো এটাই ছিল মায়ের একমাত্র ব্রত। পড়াশোনা খরচ চালাতে গিয়ে অনেক সময় এনজিও সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার করতে হতো মাকে।

যা হয়তো বাংলাদেশের অনেক পরিবারের কমন চিত্র।
ছোটবেলা থেকেই মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে কিভাবে বিদেশ যাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন অবস্থায় ম্যাচের সবাই যখন চাকরি বা বিসিএস দেওয়ার জন্য প্রথম আলো পত্রিকা পড়তেন, আমি তখন বিদেশে পড়াশোনা ইনফরমেশন টুকু পড়ার টেবিলে জমিয়ে রাখতাম। সুজয় দা, কানাই, মিলন ও তাপস দা ভালোভাবে বলতে পারবে।
এরপর কোনভাবে এমবিএ শেষ করার পর চাকুরী খোঁজার উদ্দেশ্যে শূন্য হাতে ঢাকা যাওয়ার প্রস্তুতি। ছাত্রের মা অঞ্জলি দিদিকে বললাম ঢাকায় চলে যাব টাকা লাগবে। কোন প্রশ্ন ছাড়াই শুধু জিজ্ঞাসা করলেন কত? এরপর কোন একদিন সবাইকে রেখে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা। কোন নোটিশ ছাড়াই উঠে পড়লাম ছোট কাকা কাকিমার বাসায়। ছোট কাকি খুব সুন্দর মনের মানুষ সকালে ব্যাংকে যাওয়ার আগে সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার সব গুছিয়ে রাখতেন খাবার টেবিলে। মাস তিনেকের মধ্যে রুপার ভাই লক্ষণের মাধ্যমে ছোট্ট একটা অফিসে ছোট্ট একটা চাকরি পেলাম, সাথে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট।
চাকরিতে কাজের চাপ ও মালিক না থাকলে বিদেশে পড়াশোনা নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করতাম দীর্ঘসময়। এর মধ্যে পছন্দের তালিকায় প্রথম ছিল ক্যানাডা। ক্যানাডায় পড়াশোনা করতে হলে হতে হবে তখর মানের ভালো স্টুডেন্ট বা থাকতে হবে বাপের অঢেল টাকা। যার কোনটাই আমার ছিল না। আশাহত হবার শেষ প্রান্তে ছোট কাকা ডক্টর সুনীল কুন্ডু একদিন ডেকে বললেন কোরিয়াতে কাজের জন্য লোক নিচ্ছে। যদি কোরিয়ান ভাষা পরীক্ষায় পাস করতে পারিস তাহলে কাজের জন্য কোরিয়া যেতে পারবি।
শোনা মাত্রই ফার্মগেটে কোচিং সেন্টারে আমি আর রুপা ৪০০০ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম। ক্লাস শুরু হত বিকাল পাঁচটার দিকে। সো অফিস থেকে চারটার দিকে বেরিয়ে পাঁচটায় ক্লাসে যোগ দিতাম। সপ্তাহখানে যাওয়ার পরে মালিক ডেকে বললেন এভাবে আগে আগে অফিস থেকে যাওয়া যাবে না। কি আর করা! হয়ে গেল আমার কোরিয়ান শেখা! এর কিছুদিন পর ২০০৮ সালে কোরিয়ার নিয়োগের ব্যাপারে বোয়েসেল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেন। আমি রূপা সহ চারজনের জন্য এপ্লাই করলাম। চারজনের মধ্যে শুধু সতীনাথ দার নাম আসলো লটারিতে।
কি আর করা আবারও আশাহতো। কাকা আবার একদিন ডেকে বললেন কোরিয়াতে পড়তে যা। কোরিয়ান সরকার অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডি পড়াশুনার জন্য বৃত্তি দিয়ে থাকেন। কাকার কথামতো আবার লেগে পড়লাম বৃত্তি পাবার জন্য। কিন্তু নিম্নমানের ছাত্র হওয়ার কারণে এবারও রেজাল্ট নেগেটিভ। তারপর কোরিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরের নিকট ইমেল করতে শুরু করলাম। হেমন্তর কোন এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি চন্নাম ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রফেসরের ইমেইল। I can recommend your name to get the PHD admission, but I can not provide any financial assistance. উত্তরে শুধু বলেছিলাম yes professor, I am agree with you. I can do it. যদিও জানতাম না What is or how to do PhD. এডমিশন হওয়ার পর পকেটে মাএ ১২০০ ডলার নিয়ে চলে এলাম কোরিয়া। কাকা কাকির ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিয়েই ভিসা পেয়েছিলাম।
আসার পর পরলাম আর এক ক্যাচালে। চারিদিকে শুধু কোরিয়ান ভাষা। কিছুই বুঝিনা। নেই কোন চাকুরি। কি এক মহা বিপদ। ৬ দিনের মাথায় কাকাকে বললাম বাংলাদেশে চলে যাব। এখানে নেই কোন চাকরি, কাছে নেই টাকা, টিউশন ফি প্রচুর, এখানে থাকা সম্ভব নয়। আমার করুণ দশা দেখে কাকা সবুজের মাধ্যমে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা মতো পাঠিয়ে দিলেন আমার কোরিয়ান ব্যাংক একাউন্টে আর বললেন try to stay there. এরপর আমাকে আর কোনদিন পিছনে ফিরে দেখতে হয়নি।
কোরিয়ার ন্যাশনালিটি পাওয়ার পর নিজের ব্যবসা ও চাকরি ফেলে চলে এসেছিলাম ক্যানাডায় । দুই বছর দুই মাস পর নিজের প্রচেষ্টায় 🇨🇦 Canadian গ্রীন কার্ড পাওয়ার পর ফিরে যাচ্ছি নিজের গন্তব্যস্থল কোরিয়ার Gwangju শহরে চাকরি ও ব্যবসা ACCN Grocery for Gwangju Migrants করতে।
চলার পথ এতটা মসৃণ হতো না যদি না স্পর্শ পেতাম আমার ছোট কাকা ডক্টর Sunil Kundu , আমার প্রফেসরগন: Prof. Yoon, Prof. Na, Prof. Kim, Universal Cultural Center, Mukul Basu মুকুল দাদা, Seo IL Gweon 형님 HanBaek এর মালিক Mr. Yoon সহ বিভিন্ন গুণী মানুষের!
Saha Rupa & Red Deer বাসীকেউ অসংখ্য ধন্যবাদ সবসময় পাশে থাকার জন্য!
Canadar Vancouver থেকে এখনই প্লেন ছাড়বে কোরিয়ার উদ্দেশ্যে।
সবাই ভাল থাকবেন আর আমাদের জন্য আশীর্বাদ করবেন।
Soumitra
010-3040-5100
26.06.2024
Canada 🇨🇦